| |
               

মূল পাতা রাজনীতি দেশের জনগণ অনিবার্য ধ্বংস থেকে বাঁচতে চায় : খন্দকার মোশাররফ


দেশের জনগণ অনিবার্য ধ্বংস থেকে বাঁচতে চায় : খন্দকার মোশাররফ


রহমত নিউজ ডেস্ক     15 February, 2023     05:13 PM    


বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত দিনের আগের রাতেই রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে দলীয়করণকৃত প্রশাসন ও পুলিশ এবং দলীয় পান্ডাদের দিয়ে ব্যালট বাক্স বোঝাই করে যে সরকার জনগণের বিপুল সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসার নির্লজ্জ বড়াই করে-সেই নিশাচর সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট, অযোগ্যতা ও অব্যবস্থার ফলে বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানী, সার, চাল, ডাল, আটা, মাছ, মাংস, ডিম ও মরিচসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সব কিছুর মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি যাতায়াত, বাড়ীভাড়া, চিকিৎসা ও শিক্ষার ক্রমবর্ধমান ব্যয়বৃদ্ধির ফলে দেশের জনগণ আজ অতিষ্ট, ক্ষুব্ধ এবং অনিবার্য্য কারনেই তারা প্রকাশ্যেই প্রতিবাদ জানাচ্ছে। দেশের জনগণ এই দুঃসহ বর্তমান এবং অনিবার্য্য ধ্বংস থেকে বাঁচতে চায়। তাদের সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ ও অক্ষম সরকারের পরিবর্তন চায় বলেই বিরোধী দলের সভা, সমাবেশ, মিছিলে তারা সক্রিয় ভাবে অংশ নিচ্ছে; হামলা, মামলা, নির্যাতন অগ্রাহ্য করতে সাহসী হয়েছে এবং বিজয়ের লড়াইকে বেগবান করছে। অন্যদিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও নগদ দেশী-বিদেশী মুদ্রার অভাবে শিল্প, বানিজ্য, কৃষি যে সংকটে পড়েছে তা থেকে মুক্তির পথ দেখা যাচ্ছে না। এর উপর সরকার, সরকারী দল এবং তাদের ঘনিষ্ঠ জনেরা দেশের সরকারী, বেসরকারী ব্যাংকগুলো থেকে ক্ষমতাসীনদের সহযোগীতায় ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করছে। সেকেন্ড হোম, বেগম পাড়া, দুবাইয়ে গুলশান-৩ আর সুইসব্যাংকে জমা হচ্ছে এসব লুটের টাকা। আর বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানী, সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে জনগণের পকেট কেটে তাদের ফতুর করে দিয়ে তথাকথিত উন্নয়নের নামে ধোঁকা দেয়া হচ্ছে। একদিকে কর্মহীন, ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে আর অন্যদিকে বাড়ছে হাতে গোনা কিছু মানুষের অবৈধ সম্পদ। ঋণ বাড়ছে দেশ, দেশের মানুষ ও দেশের শিল্প-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের।

আজ (১৫ ফেব্রুয়ারি) বুধবার  গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গতকাল (১৩ ফেব্রুয়ারি) মঙ্গলবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনরিপ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচিত বিষয়াদির ভিত্তিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, এমন এক জাতীয় দূর্যোগ মোকাবেলায় যখন দেশের স্বার্থে সকলের একযোগে কাজ করা দরকার, তখন অবৈধ ও দূর্নীতিবাজ সরকার সমস্যার সমাধানের পরিবর্তে জনগণের স্বার্থে যারা কথা বলে তাদের উপর লাঠিচার্জ করে, গুলি চালিয়ে, মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে, নির্যাতন করে স্বৈরাচারী কায়দায় ক্ষমতায় টিকে থাকার শেষ চেষ্টা করছে। ইতিহাস সাক্ষীÑ এমন চেষ্টা অতীতে যেমন ব্যর্থ হয়েছে এবারেও হতে বাধ্য। জনগণের সংকট মোচনের লক্ষ্যে ঘোষিত বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহের ১০ দফা দাবী আদায়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনের জন্য সরকার পুলিশী হামলা-মামলার পাশাপাশি শান্তি সমাবেশের নামে প্রতিনিয়ত জনগণকে ভয় দেখানো; সভা-মিছিলে হামলা করে আহত, নিহত, নির্যাতীত করে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে গায়েবী মামলা দিয়ে এবং বিরোধী দলের প্রতিটি কর্মসূচীর দিন পাল্টা কর্মসূচী দিয়ে ক্রমাগত দ্বন্ধ ও সংঘাতের উষ্কানী দিচ্ছে। বিরোধী দল সচেতন ভাবে এসব প্ররোচনার ফাঁদে পা না দেয়ায় সরকারী দলের মন্ত্রী ও নেতারা হতাশ হয়ে আবোল তাবোল কথা বলে লোক হাসাচ্ছে। অতি সম্প্রতি সরকারের অনুগত কয়েকটি টিভি চ্যানেলে কয়েক বছর আগে ডিজিটাল কায়দায় বানানো এমন এক ভিডিও প্রচার করেছে যা দেখলে যে কোন সাধারণ নাগরিকও বুঝবে যে, এটা নোংরা রাজনৈতিক অপপ্রচারের এক বানোয়াট ও নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। সরকারী দলের অরাজনৈতিক অপকৌশলের পাশাপাশি আমরা তদের সহযোগী অনুগত মিডিয়ারও অনৈতিক কার্যক্রমের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এই ভিডিও প্রচারের পর কমেন্ট বক্স ও সোস্যাল মিডিয়ায় সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেলগুলোর নির্মম অথচ সঠিক সমালোচনার ঝড় বইছে। কাজেই এ ব্যাপারে নতুন কিছু না বলে আমরা শুধু বলবো যে, চলমান গণআন্দোলনকে বাধাগ্রস্থ এবং দেশের সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করার এই বৃথা অপচেষ্টা মাঠে মারা গেছে। জনগণ প্রতিদিনের জীবনে যে নির্মম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছেন তা ভুলিয়ে দেয়ার কিংবা তা থেকে মুক্তির যে লড়াই তা থামিয়ে দেয়ার সাধ্য কোন ভূয়া ভিডিও কিম্বা কোন চ্যানেলের অপপ্রচারের নেই। থাকেনা কখনও।

তিনি আরো বলেন, গত ১১ ফেব্রুয়ারি ১০ দফা দাবী এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অব্যহত মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সারা দেশে সকল ইউনিয়নে যে পদযাত্রা কর্মসূচী ছিল তা সফলভাবে পালিত হলেও দেশের বেশ কিছু জেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে শান্তিপূর্ন পদযাত্রায় যোগদানকারী নেতা-কর্মীদের উপর সরকারী দলের তথাকথিত শান্তি সমাবেশ থেকে আক্রমণ চালিয়ে শত শত নেতা-কর্মীকে আহত করা হয়েছে, গুলিবিদ্ধ করা হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশের ভূমিকা ছিল দর্শকের কিম্বা ক্ষমতাসীনদের পক্ষে। এমনকি আহত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেও মামলা দেয়া হয়েছে । আসামী করা হয়েছে হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে, গ্রেফতার করা হয়েছে অসংখ্য নেতা-কর্মীকে। আমরা এসব অগণতান্ত্রিক ও নিপীড়নমূলক কার্যক্রমের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সরকারী দলের সম্মেলনের দিন আমরা ঘোষিত কর্মসূচী স্থগিত করেছিলাম। অথচ তারা আমাদের প্রতিটি কর্মসূচীর দিন পাল্টা কর্মসূচী দিয়ে চলেছে। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এসব ঘটনা বর্জনীয় বলেই তা জনগণ প্রত্যাখ্যান করে নিন্দা জানায়। জনগণ আশা করে সরকারী দল রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে এমন সহিংস তৎপরতা বন্ধ করবে। বিএনপি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, জনগণের দূর্ভোগ মোচন এবং দেশ ও দেশের জনগণকে দূর্নীতি, অনাচার, লুট ও ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে অন্যায় ভাবে কারারুদ্ধ দেশনেত্রী খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক কারনে আটক নেতা-কর্মীদের মুক্ত করতে যে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তা ক্রমান্বয়ে বেগবান হয়ে অবৈধ সরকারকে পদত্যাগে ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধ্য করবে ইনশাআল্লাহ। আমরা দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে এবং মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ ফসল গণতন্ত্র পুণঃরুদ্ধারে দেশের সকল শ্রেণী পেশার জনগণ ও মিডিয়ার সহযোগীতা কামনা করি।